ঘৃতকুমারীর ব্যবহার
ঘৃতকুমারী যেমন রূপচর্চায় বেশ উপকারী একটি উদ্ভিদ তেমনি স্বাস্থ্য রক্ষায়ও এর বেশ ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন কারণে ঘৃতকুমারীর পাতা ও শাঁস ব্যবহার করা হয়।
আদ্রতা ধরে রাখতে ঘৃতকুমারীর পাতার কোন জুড়ি নেই। এটি পর্যাপ্ত আদ্রতা ধরে রাখার মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ত্বকের নিশ্চয়তা দেয়। ক্লিনজার হিসাবে ঘৃতকুমারী বেশ উপকারী। এটি ত্বককে নরম, কোমল ও উজ্জ্বল করে।
বয়সের সাথে সাথে আমাদের ত্বকে বলিরেখা পড়ে। এসব দূর করতে ঘৃতকুমারী বেশ উপকারী। তাই বলিরেখা দূর করে ত্বকে তারুণ্যের দীপ্তি ফিরিয়ে আনতে চাইলে নিয়মিত ঘৃতকুমারী ব্যবহার করতে পারেন।
শীতকালে পায়ের গোঁড়ালি ফাঁটা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। পায়ের গোঁড়ালি ফাঁটা বা ফাঁটা দাগ দূর করতে কয়েক ফোটা ঘৃতকুমারীর রসই যথেষ্ট। কয়েক ফোঁটা ঘৃতকুমারীর রস নিয়ে ফাঁটা জায়গায় ম্যাসাজ করতে হবে। তবে খুব জোড়ে ঘষা যাবে না।
ঠোঁটের ত্বক, মুখের ত্বকের তুলনায় অনেক কোমল হয়। তাই দূষণের কারণে ঠোঁট চুপসে যেতে পারে। ঠোঁটের সঠিক যত্নে ঘৃত কুমারী ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ঠোঁটে কয়েক ফোঁটা ঘৃতকুমারীর রস লাগান। এতে ঠোঁট নরম ও উজ্জ্বল হবে।
রোদে পোড়া বা ব্রণের সমস্যায় ও ঘৃত কুমারী বেশ উপকারী।
এতোক্ষণ তো রূপচর্চার কথা বললাম। এখন, স্বাস্থ্য রক্ষায় ঘৃতকুমারীর ব্যবহারে আসা যাক। ঘৃতকুমারীর রস যকৃতের জন্য বেশ উপকারী। নিয়মিত ঘৃতকুমারীর রস পান করলে পরিপাক প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এটি শরীরে শক্তি যোগায়, ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ঘৃতকুমারীর রস ডায়রিয়ার জন্য বেশ উপকারী। দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখতেও এর বেশ ভূমিকা রয়েছে। ঘৃতকুমারীর রস শ্বেত কণিকা বৃদ্ধি করতে এবং ভাইরাস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
এলভেরার জাদুকরি রহস্য
আমরা অনেকেই শখ করে বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বিভিন্ন ফুল ফল বা ভেষজ উদ্ভিদ লাগিয়ে থাকি। এর মধ্যে ” অ্যালভেরা” বা ঘৃতকুমারী গাছ থাকবেই। কিন্তু আমরা কি জানি যে এই ছোট্ট গাছটির নানা ইতিহাস ও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কত উপকার করে? মানব দেহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সকল ক্ষেত্রেই অ্যালভেরার রয়েছে জাদুকরী গুনাগুণ। আসুন অজ্ঞতায় না থেকে জেনে নিই।
মিশরীয় লোককাহিনী থেকে জানা যায়, সৌন্দর্যবর্ধন করে যে প্রকৃতিকন্যা তার লাতিন নাম অ্যালোভেরা ওরফে ঘৃতকুমারী। আর এটাই হলো মিশরের টলেমি রাজবংশের সম্রাজ্ঞী, কূটনীতিক ও পরে সীজার পত্নী ক্লিওপেট্রার ত্বকের সৌন্দর্যের গোপন রহস্য। স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্যে অ্যালোভেরার ব্যবহার আজকের নয়। প্রাচীন কালেও রানী ক্লিওপেট্রা, সম্রাট আলেকজান্ডার, বাদশাহ সোলায়মান, নেপোলিয়ন এবং ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মত বিখ্যাত মানুষেরা অ্যালোভেরা ব্যবহার করতেন। ঘৃতকুমারী গাছটা দেখতে অনেকটাই কাঁটাওয়ালা ফণীমনসা বা ক্যাকটাসের মতো। অ্যালোভেরা ক্যাক্টাসের মত দেখতে হলেও, ক্যাক্টাস নয়। এর পাতাগুলো বর্শা আকৃতির লম্বা, পুরু ও মাংসল। তরুটির রং সবুজ যার মাঝে রয়েছে রহস্যময় গুণ যার গুণকীর্তন করে কোটি ডলার কামিয়ে নিচ্ছে পাশ্চাত্য, প্রাচ্য দেশীয় তরু থেকে।
গোটা বিশ্ব জুড়ে এই গাছের জুস বা রস ক্যাপসুল বা জেলের আকারে বিক্রি হচ্ছে। এই জেলের ভেতরে আছে বিশটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা থেকে বিজ্ঞানীরা বলেন প্রাণের সৃষ্টি। এই ২০ অ্যামিনো অ্যাসিডের আটটি দেহের মাঝে তৈরি হয় না। এটা বাইরে থেকে খাদ্যের আকারে গ্রহণ করতে হয়। এটা আসে ঘৃতকুমারী থেকে।
মেছতা দূর করার আরেকটি উপাদান হলো এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী পাতার জেল। এই জেলের রয়েছে ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর করার ক্ষমতা। আক্রান্ত স্খানে আঙুলের ডগার সাহায্যে ধীরে ধীরে জেল ঘষে লাগাতে হবে এবং সারা রাত লাগিয়ে রাখতে হবে। এভাবে কয়েক সপ্তাহ লাগালে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া অ্যালোভেরা জেলের সাথে ভিটামিন ই এবং প্রিমরোজ অয়েল মিশ্রিত করে লাগালে এক সপ্তাহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যাবে। একই সাথে জেলের শরবত খেলে ভালো হবে।
অ্যালভেরাতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, ফলিক এসিড,বি ১, বি ২, বি ৩, বি ১২। প্রায় ২০ রকমের মিনারেলস যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক, সোডিয়াম,আয়রন পটাসিয়াম, কপার ইত্যাদি। মানবদেহের জন্য ২২টি অ্যামিনো এসিড প্রয়োজন আর এর মধ্যে ৮ টি উপাদান থাকা অনস্বীকার্য। প্রধান ৮ টি উপাদানসহ আনুমানিক ২০ টি অ্যামিনো এসিড অ্যালভেরায় বিদ্যমান।
মানবদেহের টিস্যু নিষ্প্রাণ হয়ে গেলে, ত্বকে ফুসকুড়ি উঠলে এলভেরার জেল খুবিই উপকারী। যাদের এলার্জির সমস্যা তীব্র তারা ১ মাস নিয়মিত অ্যালভেরার শরবত খেয়ে দেখুন, জাদুকরী ফল পাবেন।
নতুন চুল গজানোর জন্য অ্যালভেরার রস নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসেজ করে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন, সপ্তাহে ২ বার করে ২ মাস। পরিবর্তন নিজেই লক্ষ করতে পারবেন। এ ছাড়াও অ্যালভেরার রস চুল কে কন্ডিশনিং করে মোলায়েম হতে সাহায্য করে যা অনেকদিন স্থায়ী থাকে। খুশকি দূর করতে এটি প্রহরীর মত কাজ করে। এটি রক্তের কলেস্টরেল দূর করতে সাহায্য করে।
No comments:
Post a Comment