আপনি জানেন কি, আপনার সম্ভাবনা কতটুকু ? একবার ভাল করে ভেবে দেখুন? আপনার ইচ্ছা আপনার স্বপ্ন আর সম্ভাবনার তুলনা করুন। আপনি কি চান - সেটা ঠিক করুন। লক্ষ্যটাকে স্থির করুন। সফলতা তো আপনারই। আপনার ভিতরেও আছে অপার সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনাটাকে খুঁজে বের করতে হবে। আর এই খুঁজে বের করার দায়িত্বটা কিন্তু আপনারই। কিভাবে বুঝবেন, আপনার সম্ভাবনা কতটুকু? দেখুন আপনার সমস্যা অনেক। আপনার ভাল একটা লক্ষ্যও আছে। কিন্তু যখন কাজের কথা ভাবেন, তখন সমস্যাগুলো আপনার সামনে এমনভাবে হাজির হয় যে, কাজের চেয়ে বরং অকাজই হয় বেশি। হ্যাঁ, আমি জানি আমার- আপনার অনেক সমস্যা। শুধু সমস্যাই। আমি ভালভাবে কথা বলতে পারি না, আমার চেহারা ভাল না, স্বাস্থ্য ভাল না, আমার বিদ্যা- বুদ্ধির জোরও তেমন নেই। এরকম অনেক কিছুই আমার – আপনার সাথে জড়িত। আমাদের জীবনে অনেক না যুক্ত আছে। এই ‘না’ গুলো হয়তোবা আমাদের পক্ষে জীবন থেকে সরানোও সম্ভব না। তাই বলে তো এই ‘না’ এর দিকে চেয়ে থেকে পুরো জীবন হতাশায় কাটান যায় না।
একবার যদি ভাল করে ভেবে দেখেন, দেখবেন- বাহিরের যত না আছে তার চেয়ে ভিতরের যে ‘না’ টা সেটাই অনেক বেশি শক্ত। একটা কথা আছে – বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়। কথাটা সত্য। মনের ‘না’ টাকে দূর করুন। একবারে না হক, দশবারে তো হবে। দেখুন, সৃষ্টিকর্তা আমাদের যে মস্তিস্ক দিয়েছেন, আপনি শুধু সেটার কথাই ভাবুন না কেন? দেখতে পারবেন, আপনার অপার সম্ভাবনা। বুঝতে পারবেন, আল্লাহ আপনাকে কত ক্ষমতাবান করে তৈরি করেছেন। স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, আপাত দৃষ্টিতে যত সমস্যাই দেখেন না কেন, আপনার সম্ভাবনার তুলনায় তা কিছুই নয়। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত আমাদের এই মস্তিস্কের কথা সবাই জানেন। তারপরেও মনে করিয়ে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমিও আমার একটু সম্ভাবনার হিসেব করিয়ে নিই। যাতে আপনার সাথে আমিও আরেকটু আশাবাদী আর সম্ভাবনাময় হয়ে উঠি।
আমাদের মস্তিস্ক কম্পিউটারের চেয়ে অনেক বেশি গুনে জটিল। গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের মত ক্ষমতার একটি এটমিক মস্তিস্ক তৈরি করতে প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। আরও বিস্ময়কর যে, এই রকম মস্তিস্ক চালাতে প্রায় এক হাজার কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। এবং কর্ণফুলীর কাপ্তাইয়ের যে উৎপাদন, সে হিসেবে এর মত ৩২৫০ টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজন হবে প্রতিদিন এটি চালু রাখার জন্য। প্রায় আঠারটি একশতলা দালানের সমান হবে এর আয়তন। মস্তিস্কের সবচেয়ে উপরের সাদা ঢেউ খেলানো কর্টেক্সকে সমান্তরালভাবে সাজালে এর আয়তন হয় প্রায় দুহাজার বর্গমাইল। স্নায়ুতন্ত্রের একক নিউরন। যার কয়েকশত একটি আলপিনের মাথায় একত্রে স্থান করে নিতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে ইলেক্ট্রনিক সিগন্যাল মস্তিস্কে বহন করা এবং মস্তিস্ক থেকে বিভিন্ন আদেশ অতি দ্রুত হাজার কোটি সেলে ছড়িয়ে দেওয়াই নিউরনের কাজ। ব্রেইনের এতসব কাজ ঘটতে পারে সেকেন্ডের লক্ষ ভাগের মাত্র একভাগ সময়ে। মানব মস্তিস্কে রয়েছে শক্তিশালী মেমোরি সেল। এই স্মৃতি সংরক্ষণশালা প্রায় প্রতি সেকেন্ডে দশটি নতুন বস্তুকে স্থান করে দিতে পারে। সবচেয়ে আশ্চর্যের –পৃথিবীর সর্বকালের সর্বপ্রকারের যাবতীয় তথ্যকে একত্রে এই সেলে রাখা হলে এর লক্ষ ভাগের এক ভাগও পূরণ হবে না। কি, একেবারে চুপ হয়ে গেলেন যে! চলুন, শুকরিয়া আদায় করি মহান আল্লাহ তা’আলার-‘আলহামদুলিল্লাহ’। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা এই মেমোরি সেলের হাজার ভাগের এক ভাগও কাজে লাগাতে পারি না। বিজ্ঞানীরা আরও বলেন- মানব মস্তিস্ক সর্বাধুনিক কম্পিউটারের চেয়েও প্রায় দশ লক্ষ গুন বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন। দামের হিসেব করলে একটি কম্পিউটার যদি ৫০,০০০ টাকা হয়, তাহলে আমাদের একেকজনের ব্রেনের দাম দাঁড়াচ্ছে কমপক্ষে ৫,০০০ কোটি টাকা। তার মানে দাঁড়াই, আমরা যারা নিজেরাই নিজেদের অবহেলা করি, অবজ্ঞা করি এবং আমাদের দৃষ্টিতে যারা অনেক মেধাবী অর্থাৎ সবার ক্ষেত্রেই, সবার ঘাড়ের উপরেই একটি পাঁচ হাজার কোটি টাকার সম্পদ আছে। তাহলে এবার ভেবে দেখুন- আপনার সম্ভাবনা কতটুকু? ভাবুন, ভাবুন এবং আরও ভাবুন। শুধু মাত্র এই মস্তিস্কের মূল্যায়নই যথেষ্ট আপনার সম্ভাবনা খুঁজে বের করার জন্য। আল্লাহ আপনাকে - আমাকে সব দিয়েছেন শুধু কাজে লাগাতে হবে আমাদের। তবেই সফলতা ধরা দিবে। গোমড়া মুখটা এবার হাল্কা করুন তো। একটু হাসুন। নিজের শক্তি, সম্ভাবনার সমন্বয়েই সফলতা। এবার কাজে নেমে পড়ুন। যে কোন ভাল কাজ। আপনাকে ঠেকিয়ে রাখার মত মনে হয় না- আর কোন বাঁধা আছে। এবার এগিয়ে যান। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও আপনার সাথে আছেন। ইনশাআল্লহ, আপনি পারবেন।
No comments:
Post a Comment